স্বদেশ ডেস্ক:
জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ প্রশাসনে পরিবর্তন আনছে সরকার। গত পাঁচ দিনের ব্যবধানে ২৮ জেলার জেলা প্রশাসক (ডিসি) পদায়ন করা হয়েছে। পদায়নের আগে তাদের ছাত্রজীবনের রাজনৈতিক আদর্শ, পারিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিবেচনায় নেয়া হয়। আজ বৃহস্পতিবার পদায়ন হওয়া ডিসিদের বিফ্রিং করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১৯৭২-এ সংসদ নির্বাচনে রিটার্নিং অফিসার কাকে নিয়োগ দেয়া হবে এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলা না থাকলেও এই জেলা প্রশাসকদেরকেই রিটার্নিং অফিসার হিসেবে নিয়োগ দেবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। কেন্দ্রের ভোট গ্রহণ থেকে শুরু করে বাতিলের ক্ষমতাও তাদের থাকে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থাকে রিটার্নিং কর্মকর্তা তথা ডিসির অধীনে। ফলে এসব ডিসির নিরপেক্ষতাই সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রধান চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয় সরকার বিশ্লেষক ড. তোফায়েল আহমেদ নয়া দিগন্তকে বলেন, যেকোনো সময় জেলা প্রশাসক পদে পরিবর্তন হতে পারে। এটি দোষের কিছু নয়। তবে যদি তাদের কর্মকাণ্ডে কোনো বিশেষ উদ্দেশ্য প্রকাশিত হয় তাহলে সেটি কোনোভাবেই কাম্য নয়। প্রজাতন্ত্রের প্রতিটি কর্মচারীর উচিত তার চাকরির শর্ত মেনে চলা। যদি তারা নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে ব্যর্থ হন তাহলে জনমনে তাদের প্রতি ক্ষোভ ও ঘৃণা সৃষ্টি হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোক প্রশাসন বিভাগের প্রফেসর ড. মোসলেহ উদ্দীন আহমদ বলেন, জেলা প্রশাসক নিয়োগের জন্য ফিটলিস্ট তৈরি করা হয় এবং সেখান থেকেই পদায়ন করা হয়। কিন্তু হঠাৎ করে তাদের তুলে নিয়ে এলে তাদের মধ্যে হতাশা তৈরি হতে পারে। এতে প্রশাসনে কাজের গতিশীলতা কমতে পারে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের দায়িত্বে থাকা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন নিশ্চিত করতে হবে। সরকারের একটানা ১৪ বছরের শাসনামলে রাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বেসামরিক প্রশাসনের কর্মকর্তা-কর্মচারীর একটি বড় অংশ সরকারের আনুকূল্যে সুযোগ-সুবিধা পেয়ে দলটির অনুরক্ত হয়ে পড়া অস্বাভাবিক নয়। এ জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য প্রশাসনের নিরপেক্ষতা বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন তিনি।
গত বছরের সেপ্টেম্বরে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান নিজ কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেন আবারো ক্ষমতায় আসেন, সে জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়েছিলেন। এ জন্য বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর দোয়া করা উচিত বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি। এ ছাড়াও তিনি আওয়ামী লীগের মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থীর জয় চেয়েও মুনাজাত করেছিলেন। এ ঘটনায় তাকে ভোটের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ইসি।
এরপর একই বছরের অক্টোবর মাসে ইসির পক্ষ থেকে আয়োজিত রাজনৈতিক দল ও বিভিন্ন অংশীজনদের নিয়ে ধারাবাহিক সংলাপে বক্তব্য দিতে গিয়ে ডিসিদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন নির্বাচন কমিশনার আনিসুর রহমান। মাঠ প্রশাসনের কর্তাদের ‘নখদন্তহীন’ এবং তারা ‘মন্ত্রী-এমপিদের ছাড়া চলতে পারেন না’ বলে মন্তব্য করেন তিনি। ম্যাজিস্ট্রেটদের জন্য বরাদ্দ গাড়ির জন্য তেলের টাকাও ডিসিরা দেন না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তার বক্তব্যের এই পর্যায়ে সভাকক্ষের মধ্যেই একযোগে ডিসি-এসপিরা হইচই শুরু করেন। এ সময় সিইসি-সহ অন্য কমিশনার এবং জননিরাপত্তা বিভাগের সচিবও মঞ্চে ছিলেন। এ পর্যায়ে কমিশনার আনিসুর রহমান বলেন, ‘তাহলে কি আপনারা আমার বক্তব্য শুনতে চান না।’ তখন সবাই একযোগে ‘না’ বললে নিজের বক্তব্য শেষ না করেই বসে পড়েন তিনি।
এ দিকে নতুন পদায়ন হওয়া জেলা প্রশাসকদের ব্রিফিং সেশন আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হবে। এতে সভাপত্বি করবেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) মো: মাহমুদুল হোসাইন।
বিফ্রিংয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, জননিরাপত্তা বিভাগ, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভূমি মন্ত্রণালয়, কৃষি মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ, কারিগরি ও মাদরাসা শিক্ষা বিভাগ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়, সুরক্ষা সেবা বিভাগ, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সচিব এ ব্রিফিং সেশনে বক্তব্য দেবেন।